PhonePe Blogs Main Featured Image

Investments

ঝুঁকি এবং রিটার্ন- একই কয়েনের দু’টি দিক

PhonePe Regional|3 min read|28 May, 2021

URL copied to clipboard

বিনিয়োগের ব্যাপারে বুঝে শুনে ঝুঁকি নিলে তা সম্পদ সৃষ্টির পথে অনেকটাই সহায়ক হয়

সিনেমা এবং বইয়ের মতো প্রচুর জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গে জীবনে ঝুঁকির ভূমিকাকে নাটকীয়ভাবে পেশ করা হলেও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিন্তু ঝুঁকির ভূমিকা সত্যিই অনস্বীকার্য। বিনিয়োগের ব্যাপারে বুঝে শুনে ঝুঁকি নিলে তা আপনার সম্পদ বাড়ানোর লক্ষ্যে অনেকটাই অবদান রাখে। বাস্তবে, শুধুমাত্র “নিরাপদ” প্রোডাক্টে বিনিয়োগ করা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে অত্যন্তই ঝুঁকিসাপেক্ষ প্রমাণিত হতে পারে।

সুরক্ষিত বিনিয়োগ কি সত্যিই নিরাপদ থাকে?

অনেক বিনিয়োগকারীই সেভিংস অ্যাকাউন্টে বা ফিক্সড ডিপোজিটে নিজেদের বিনিয়োগ করেন, কারণ সেগুলিই চিরাচরিতভাবে নিরাপদ ও স্থির অঙ্কের রিটার্ন আনবে বলে মনে করা হয়। তবে, এই নিরাপদ বিনিয়োগগুলিতে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রেও একটি ঝুঁকি কিন্তু রয়েই যায়: মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি।

মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি আরও ভাল করে বোঝার জন্য এখানে একটি সহজ উদাহরণ দেওয়া হল: ধরুন 5 বছর আগে আপনি মাত্র ₹30-এ মশলা ধোসা কিনতেন, ঠিক সেই একই ধোসার জন্য আপনাকে এখন ₹45 দিতে হয়। তার মানে, এই 5 বছরে, মশলা ধোসার দাম প্রতি বছরে 8%-এর থেকেও বেশি হারে বেড়েছে। এটিকেই বলে মুদ্রাস্ফীতি বা সময়ের সাথে সাথে দাম বাড়া।

বিনিয়োগের দিক থেকে এটি আরও ভালভাবে বুঝিয়ে বলতে গেলে, ধরুন, আপনি কোনও খুবই নিরাপদ বিকল্পে 5 বছর আগে ₹30 বিনিয়োগ করেছিলেন যেটি থেকে প্রতি বছরে আপনার 6% রিটার্ন আসে। আজ সেটির মূল্য ₹40। আপনার ₹10 লাভ হলেও, এখনও ₹5 ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এটিই আপনার বিনিয়োগের মুদ্রাস্ফীতিজনিত ঝুঁকি।

যদিও প্রত্যেক বিনিয়োগকারীকেই নিরাপদ বিনিয়োগ প্রোডাক্টে কিছু না কিছু বিনিয়োগ করতেই হয়, তাহলেও একইরকম প্রোডাক্টে আপনার সম্পূর্ণ বিনিয়োগ করলে তার ফলে বিনিয়োগ করা টাকার আসল মূল্য প্রায়ই কমে যেতে দেখা যায়। দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ সৃষ্টির জন্য বুঝে শুনে ঝুঁকি নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, নাহলে কোনও আর্থিক লক্ষ্য পূরণের জন্য ভবিষ্যতে যখন আপনার টাকার দরকার হবে তখন দেখবেন হাতে কম টাকা আছে। শুধুমাত্র “নিরাপদ” বিনিয়োগের বিকল্পে টাকা রেখে দীর্ঘ মেয়াদে আর্থিক লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা কিন্তু কিছুটা ব্যাট করতে নেমে চার বা ছক্কা হাঁকানোর ঝুঁকি না নিয়ে শতরানের স্বপ্ন দেখার মতোই।

দেখা যাক, বিনিয়োগকারীরা কীভাবে উচ্চ ঝুঁকি ও বেশি রিটার্নের বিকল্পে টাকাপয়সা বিনিয়োগ করে উপকৃত হন।

ঝুঁকি বনাম রিটার্ন : সঠিক ভারসাম্যের মেলবন্ধন

ঝুঁকি আর রিটার্নের প্রায়ই সমমুখীন হয়ে থাকে, অর্থাৎ ঝুঁকি যত বেশি ততোই বাড়বে সম্ভাব্য রিটার্ন। কিন্তু আমরা এতক্ষণ ধরে যে ঝুঁকির ব্যাপারে আলোচনা করছি সেটি আসলে কী? এখানে আমরা বাজারের ওঠা-নামার ভিত্তিতে আপনার বিনিয়োগেও ওঠা-নামার বিষয়টিকে ঝুঁকি বলছি। স্বল্প মেয়াদে, এই ওঠা-নামা অনেকটাই ঘনঘন হতে পারে। কিন্তু, দীর্ঘ মেয়াদে আপনার বিনিয়োগ আরও বেশি হারে বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

আপনি কতটা ঝুঁকি নিতে পারবেন, আপনার লক্ষ্য এবং বিনিয়োগের সময়কাল কত তার উপর নির্ভর করে কিছুটা বুঝে শুনে ঝুঁকি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়গুলি মাথায় রাখলে আপনি ঝুঁকি এবং রিটার্নের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য আনতে পারবেন।

কীভাবে বেশি রিটার্নের সম্ভাবনা থাকা বিনিয়োগের বিকল্প আপনাকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বিকল্পের তুলনায় বেশি টাকা জমাতে সাহায্য করতে পারে তা বোঝানোর জন্য এখানে একটি উদাহরণ দেওয়া হল:

ধরুন আপনি 25 বছর বয়সে বিনিয়োগ করা শুরু করলেন এবং 50 বছর বয়সের মধ্যে 1কোটি টাকা জমানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোলেন। আপনি এই লক্ষ্যে বহুভাবে এগোতে পারেন। যেমন: আপনি নিরাপদ কোনও বিনিয়োগের বিকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন যা থেকে 6% রিটার্নের অফার আছে অথবা 12% রিটার্নের সম্ভাবনা আছে এমন ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডেও (এতে স্বল্প মেয়াদে ওঠা-পড়া হয়) বিনিয়োগ করতে পারেন। তাহলে দুই ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতি মাসে যত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে তা এখানে দেওয়া হল:

পর্যবেক্ষণ:

  • এটি দেখায় যে আপনি যদি শুধু বছরে 6% রিটার্ন সহ নিরাপদ বিকল্পে বিনিয়োগ করেন তাহলে 50 বছর বয়সের মধ্যে ₹1 কোটির লক্ষ্যে পৌঁছতে আপনাকে প্রতি মাসে ₹15,000 বিনিয়োগ করতে হবে।।
  • আপনি যদি ইকুইটি মিউচুুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেন এবং প্রতি বছরে 12% রিটার্ন থেকে আয় হয়, তাহলে ₹1 কোটির লক্ষ্যে পৌঁছতে আপনাকে প্রতি মাসে আপনাকে মাত্র ₹6,000 বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে নিরাপদ বিকল্পের থেকে এই বিকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ তুলনায় অনেকটাই কম।

এখন যখন আপনি জেনেই গেছেন যে দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে নিজের বিনিয়োগে কিছুটা ঝুঁকি নিতে হয়, তাহলে আপনার বিনিয়োগ ধারাবাহিক রাখতে কী কী করতে পারেন সেরকম কয়েকটি বিষয় এখানে দেওয়া হল:

  • দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বিনিয়োগ করে রাখুন — দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগ করে রাখলে ইকুইটি ফান্ডের মতো যে বিনিয়োগের বিকল্পগুলিতে এমনকি স্বল্প হলেও কিছুও ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে, সেগুলি সম্পূর্ণ নিরাপদ বিনিয়োগের বিকল্পের থেকে আরও ভাল রিটার্ন দেয় বলেই দেখা গেছে। কাজেই যত বেশি সময় ধরে বিনিয়োগ করে রাখতে পারবেন, ততই ভাল।
  • ধারাবাহিকতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ — মাসিক SIPs-এর মাধ্যমে নিয়মিত বিনিয়োগ করতে থাকুন। এতে আপনার পক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে টাকা জমানো সুবিধাজনক তো হবেই, সাথে স্বল্পমেয়াদী বাজারের ওঠানামার ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করবে।
  • বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করুন– আপনি ইকুইটি ফান্ড, ডেট ফান্ড ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ধরনের বিকল্পে টাকা ভাগ করে বিনিয়োগ করতে পারেন, তাতে আপনার ঝুঁকি নেওয়ার স্বাচ্ছন্দ্য আর বিনিয়োগ দুইয়ের মধ্যেই সামঞ্জস্য রাখা যাবে। এই ব্যাপারে এখানে আরও পড়ুন।

বিনিয়োগ করায় বুঝে শুনে ঝুঁকি নিতে পিছপা হবেন না, কারণ এটাই আপনাকে দীর্ঘ মেয়াদে সম্পদ বাড়াতে সাহায্য করবে।

মিউচুয়াল ফান্ড বাজারের ঝুঁকিসাপেক্ষ। বিনিয়োগ করার আগে স্কিম সংক্রান্ত সব ডকুমেন্ট ভাল করে পড়ে নিন।

Keep Reading